একুশ শতকে
এক
ফাগুনের আগুনে।
-জয়নাল আবেদীন মুকুল
ভালোবাসা মানুষে,
সৈকতের ফানুসে।
ভালোবাসা নদীতে,
ভেসে যাই যদি’তে।
ভালোবাসা বাতাসে,
নীলাম্বরী আকাশে।
ভালোবাসা ভালো’তে,
জোছনার আলোতে।
ভালোবাসা ফুলেতে,
বাঁকখালী কুলেতে।
ভালোবাসা পাখিতে,
লাজ লাজ আঁখিতে।
ভালোবাসা বরণে,
কবিতার চরণে।
ভালোবাসা সংগীতে,
রমণীয় ভংগীতে।
ভালোবাসা গাছেতে,
সাগরের মাছেতে।
ভালোবাসা হাসিতে,
ঝাউ শাখে বাঁশিতে।
ভালোবাসা কাজেতে,
সুমুদ্দুরে সাঁঝেতে।
ভালোবাসা আদরে,
কাছে নিলে সাদরে।
ভালোবাসা মায়েতে,
ছায়া ছায়া গাঁয়েতে।
ভালোবাসা রূমাতে,
নিরিবিলি ঘুমাতে।
ভালোবাসা কন্যাতে,
খুশি খুশি বন্যাতে।
ভালোবাসা স্মৃতিতে,
সুখ স্বপ্ন প্রীতিতে।
ভালোবাসা শরতে,
কুয়াশার পরতে।
ভালোবাসা বাদলে,
মেঘে মেঘে মাদলে।
ভালোবাসা গরমে,
বিকেলের নরমে।
ভালোবাসা মাটিতে,
আল ধরে হাঁটিতে।
ভালোবাসা আশাতে,
বর্ণমালা, ভাষাতে।
ভালোবাসা ফাগুনে,
একুশের আগুনে।
দুই.
একুশ ছড়িয়ে দাও
জাফরুল আহসান
একুশ সর্বত্রগামী নয়
একুশ স্পর্ধায় ঋদ্ধ রুখে দিতে ভয়
প্রভূত্বের ব্যাধি উৎখাতে
প্রার্থনায় রক্তে অশ্রুপাতে
একুশকে বিশ্বাসে উস্কে রাখতে হয়
একুশ সহজলভ্য নয়
মাথা নত না করার বঙ্গীয় প্রত্যয়
প্রতিবাদে প্রতিশোধে জ্বলে
লোভ মোহ ঘৃণার বদলে
একুশকে মননে রপ্ত করতে হয়
একুশ কী কংক্রিট স্তূপ?
কাকতাড়ুয়ার শৌর্য,মাটির তুরুপ
প্রত্যক্ষ জীবনধর্মে ঐক্য
সর্বত্র সমানতালে সখ্য
একুশ মৌসুমী নয়, চিরায়ত রূপ
একুশ কী রাজটিকা কারো?
একুশ ছড়িয়ে দাও যতদুরে পারো
একুল ওকুল মিশে যাক
উঁচুনিচু যতই ফারাক
একুশ আদৃত হোক ক্রমান্বয়ে আরো
একুশ–এক স্বপ্ন রঙিন
হাজার বছরে মেলে এরকম দিন
পরাক্রান্ত সময়ের কাছে
পৃথিবীর আনাচে কানাচে
শুদ্ধতম সম্পর্কের সোনালি কাবিন।
তিন.
গীতিকবিতা: বাঙালি, বাংলা বলো
মহিউদ্দিন তাহের
ও বাঙালি বাংলা বলো, বাঙালি বাংলা বলো
জীবন দিয়ে রফিক-সালাম-বরকত-জাব্বার বলে গেল
ও বাঙালি বাংলা বলো, বাঙালি বাংলা বলো
দুই শতাধিক বছর ধরে
বাঙালির কন্ঠ রুদ্ধ করে
তবু বাংলা ভাষার কবিই প্রথম এশিয়াতে নোবেল পেল
ও বাঙালি বাংলা বলো, বাঙালি বাংলা বলো
যে বাঙালি জ্ঞানী-গুণী
ভিন্ দেশি বোল সে মুখে শুনি
গোলামির ওই ভাষা মুখে মিথ্যে গরব দেখিয়ে চলো
ও বাঙালি বাংলা বলো, বাঙালি বাংলা বলো
একুশে ফেব্রুয়ারিকে আজ
চেয়ে দ্যাখো বিশ্বসমাজ
মাতৃভাষা দিবস বলে যত্নে মাথায় তুলে নিল
ও বাঙালি বাংলা বলো, বাঙালি বাংলা বলো।।
চার.
মুঠোফোনে বর্ণমালা
দিদারুল আলম
২১/০২/২০২৩/
রাত ভর যুৎসই শব্দ খুঁজে খুঁজে নিদারুন ক্লান্ত হলে
মুঠোফোনে ধরা দেয় বোধ অনুভব
দু’চারটা আক্ষরিক শব্দ বর্ণমালা মুঠোফোনে
সুখে হিতে সমৃদ্ধির বিকাশের প্রাণের উন্মেষ।
ক্ষিপ্রতায় প্রকাশ অধীর ক্ষণিক বিশ্রাম পেলে
কাব্যের জরায়ু সিক্ত বীর্যবান ধ্বনি
গেঁথে নেয় বিলোলিত কবিতা শরীর
অসংকোচ প্রকাশের অকুণ্ঠ পিপাসা
মৃত্যুর অমিয় তৃষা জন্ম ঋণ শোধ।
অক্লান্ত নির্ঘুম চোখে আঁকিবুকি মাত্রা তাল লয়
ছন্দে পর্বে ভাগাভাগি শেষ হলে উদ্দীপ্ত নিলয়।।
পাঁচ.
কেমন আছো
রুহুল কাদের
কেমন আছো বাংলা ভাষা
কেমন আছো?
ছদ্মবেশীর বলৎকারে
চুল খুলে কি নাচো?
তোমায় লেখে ভুল বানানে
দৈত্য নাচে ফুল বাগানে
কাঁদে রফিক,বরকত
রক্তে কেনা স্বপ্ন বেচবে
দিলে কাকে দাসখত!
ছয়.
❤️বর্ণমালা
মাহবুবা চৌধুরী
আমি চাষি নই, চাষি হলে
আমার ফসলি জমিতে চাষ হতো বর্ণমালা
লাঙ্গল ফলায় উঠে আসতো তোমাদের রক্তঝরা ঘ্রান
শস্যের চঞ্চুতে চঞ্চুতে শোভিত হতো
অ আ ক খ শিল্পতান।
পাখি হলে রক্তিম সূর্যকে তুলে নিতাম ডানায়
পৌঁছে যেতাম পৃথিবীর সকল কোনে
বলতাম পড়ুন –
বাংলা বর্ণমালার শ্বাশত ইতিহাস শ্যাম ছায়ার আড়ালে
সালাম রফিক জব্বার বরকত আর শফিউলে।
আমি ইতিহাস বিজ্ঞ নই
হলে, ইতিহাসের পাতায়
সবকয়টা বর্ণমালার প্রবাহিত
পঙক্তির ভিতরে
রক্ত অক্ষরে দিতাম লিখে নাম ঘুমন্ত কবরে ।
আমিতো কেবল বহতা নদীর স্রোত
ইতিহাস ভাঙ্গি আর ইতিহাস গড়ি
তবু দেখ, সগর্বে পৃথিবী চষে ফিরি
এপাড়ে নাহয় অন্য কোন নদী অববাহিকায়
কাব্য লিখি সভ্যতার মৃতের চাকায়
প্রাণময় বকুলতলায়।
সাত.
স্বর্ণে লেখা বর্ণ বীর
আনোয়ারুল করিম
পাল্টে দেবে বাংলাভাষা
পাকিস্তানি বর্ণে
পাক নেতারা বিষ ঢেলেছে
বীর বাঙালির কর্ণে
বীরযুবারা গর্জে উঠে
মানেনি তা মোটে
তাদের মুখে প্রতিবাদের
ফুলকি প্রবল ছুটে
মান বাঁচাতে মায়ের ভাষার
রক্ত দিতেও রাজি
প্রতিবাদে মুখর হয়ে
জীবন রাখে বাজি
জীবন দিয়ে জীবন পেলো
আমার মায়ের বুলি
রক্ত দিয়ে এঁকে দিলো
বর্ণমালার তুলি
সেই তুলিতে মুছে ফেলে
আমার মায়ের জ্বালা
রাঙিয়ে নিলো নতুন করে
মোদের বর্ণমালা
বিশ্বজুড়ে আর মিলেনা
রক্ত লাগা বর্ণে
বীর শহীদের নাম দেখে যাও
খচিত আজ স্বর্ণে।
বাহান্নতে ভাষা পেলাম
একাত্তরে দেশ
বাংলাতে আজ সকল আশা
বাংলাতে হোক শেষ।
আট.
হ্যালো বিদেশিনী
রফিক আনাম
আমার বামপাঁজরে দখিনা হাওয়া, চিরবসন্তের হাতছানি;
শীতের ভোরের মিষ্টি রোদ, ভালোবাসার কোমল ছোঁয়া ডানপাঁজরে
– হ্যালো বিদেশিনী, তুই কি বাঙালি হ’বি? দুপাঁজরের মধ্যখানে র’বি।
তোর নয়নে তুষারপাত তুষেরআগুন মনে, পদতলে তপ্তমরু দুরুদুরু বুক;
মোর চোখে কর্ণফুলী, যৌবন নাচে ঢেউয়ের টানে
– হ্যালো বিদেশিনী, হবে কী বাঙালি ?
এখানে দৃষ্টিতে বৃষ্টি, অঙ্কুরোদ্গম সুখ।
আমরা যুদ্ধজয়ী জাতি, সকালের সূর্যটা আমাদের গৌরব;
সারাবিশ্বে পাখির ঠোঁটে মানুষের মুখে আমার মায়ের সৌরভ
– হ্যালো বিদেশিনী, দিনটা মনে রাখিস, ফেব্রুআরির একুশ তারিখ,
শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে বাঙালি হওয়ার সুযোগ পাবি।
নয়.
একুশে ফেব্রুয়ারি
– মোহাম্মদ নূরুল আলম
একুশে ফেব্রুয়ারি,
বায়ান্নর প্রখর দুপুরে মেডিকেল চত্বরে
আত্মার আহাজারি।
একুশে ফেব্রুয়ারি,
ভাষার তরে যারা দিয়ে গেল প্রাণ
তুমি ইতিহাস বহ তারি।
একুশে ফেব্রুয়ারি,
রক্তের বিনিময়ে এনেছি বর্ণমালা
তুমি স্মৃতি বহ তারি।
একুশে ফেব্রুয়ারি,
তোমারি উপহার মাতৃভাষায়
মোরা সদা সংলাপ করি।
একুশে ফেব্রুয়ারি,
শোষণপিষ্ট বাঙালি জাতির
মুক্তির রণতরী।
একুশে ফেব্রুয়ারি,
অধিকার আদায়ে একসাথে লড়ি
তুমি গৌরব বহ তারি।
একুশে ফেব্রুয়ারি,
স্বাধীনতা সূর্য উঠেছে বাংলায়
তোমারি সূত্র ধরি।
একুশে ফেব্রুয়ারি,
প্রয়োজনে আবার লড়বো মোরা
নতুন শপথ তারি।
দশ.
ফেব্রুয়ারি এলে
কানিজ ফাতেমা
ফেব্রুয়ারি এলে পলাশ-শিমুল ফুটে ফাগুনের রঙে,
বাবার কান্না, মায়ের আহাজারি কর্ণকুহরে বাজে,
ভাই হারিয়ে আজো দগদগে আগুনে পুড়ে হৃদয়,
স্মৃতির পাতায় ঘুরে ফিরে ভাসে বিভৎস দিনলিপি,
পাকিস্তানীরা কাঁধে তুলে দিল ভিনদেশী সেই ভাষা!
উর্দুভাষা কি মায়ের মুখের ভাষা হতে পারে এই বঙে!
বায়ান্নের সেই আট ফাল্গুনের দুপুরবেলার অক্তে,
রাজপথ তাই রঞ্জিত হয়েছিল ভাষা শহীদের রক্তে,
“রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”শ্লোগানে মুখরিত হল রাজপথ,
দামাল ছেলেরা প্রতিবাদে মুখর হলো দৃঢ় চিত্তে,
যোগ দিল কত শ্রমিক, যুবক, নারী, কৃষক ও জেলে,
অবশেষে বাধ্য হয়ে ওদের দাবী মেনে নিল সরকার,
বাংলাই হলো মাতৃভাষা শিশুর মুখের প্রথম বোল,
লক্ষ প্রাণের মূল্য দিয়ে অর্জিত হল প্রাণের ভাষা,
স্বীয় গুণে বিশ্ব দরবারেও করে নিল যে ঠাঁই,
বাংলা বলি, বাংলায় লিখি, বাংলাকে ভালোবাসি।
এগারো,
ভুলিনি ভুলব না
সাবিনা ইয়াসমিন
এখন মাস ফেব্রুয়ারি
এখন মাস ভাষার,
বায়ান্নতে এসেছে একুশ
মায়ের ভাষায় কথা বলার।
ফুটেছে পলাশ শিমুল
ফুটেছে ঐ কৃঞ্চচূঁড়া,
শহীদদের রক্ত ঝরছে যেন ওই
হয়েছে লাল তাই ফুলেরা সকল।
ভুলিনি আমরা আসাদের শার্ট,
ভুলিনি সালাম জব্বার রফিক বরকত।
ভুলবনা কোনোদিন যারা দিয়ে গেল প্রাণ,
ভাষার তরে রেখে গেছে যারা
চির অম্লান এক সওগাত।
বার.
বর্ণমালা
জেসমিন সুলতানা
হাওয়ায় উড়ে দ্যাখো ঐ বর্ণমালার স্পন্দন
আশোকের ডালে পাখির আত্মচিৎকার!
মহাকালের বটবৃক্ষের চোখে জল
সালাম রফিক বরকত গেছে কই?
আর কতকাল কালের সাক্ষী হয়ে রই।
শোকের রাজপথে আজ দ্যাখো
বাংলা ভাষার গান।
কবিতার ফেরিওয়ারা শব্দের পসরা সাজিয়ে
বসে আছে ঐ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
“একুশের বইমেলায়”
রাত জাগা পাখি ডেকে আনে প্রভাতফেরি!
ফুলের মালায় সজ্জিত হয় শহীদ মিনার
আমরা বুকের ভেতর কষ্ট জমা রেখে
পলাশ ফুটিয়েছি ঐ রক্তমাখা রাজপথে
যেখানে মিছিলের সাথে ধ্বনিত হয়
আজও একুশে ফেব্রুয়ারি।
তের.
ভুল নম্বর ফোনে
মাঈন উদ্দিন জাহেদ
তোমাকে ছোঁবো না বলে
রদ্যার ভাস্কর্যের মত সমস্ত শৈল্পিক ভাঁজ দৃশ্যে এনেছি;
কর্ণফুলীর মোহনায় বেড়ে ওঠা যুবক পারেনি
সামান্য দুলের সৌন্দর্য লুকোতে;
সমস্ত সুন্দর ছোঁবো বলে-
তোমার হৃদয় ছুঁতে চেয়েছি।
কবিরা কল্পনা করে, ভাস্কর গড়ে শিল্পিত প্রতিমা;
তুমি কিসের আধার?
-নিথর পাথর ভেঙ্গেছে মৌনতার সীমা।
রাতের আঁধার ভেঙ্গে প্রতিটি মুহূর্তে তাই ছুঁয়ে যায় মন;
ক্লেদ গুলো ভেসে ওঠে
আমিও মানুষ তখন…
এবঙ ভুল নম্বর ফোনে
ভেসে আসে যন্ত্ররমণীর মুখস্থ শ্লোক;
শ্লোক গুলো শোক হয়-
তুমি কি কুহক?
অপেক্ষার মুহূর্তগুলোর শপাং চিৎকারে
আকাঙ্খায় সিক্ত হয়,
অহংকার তীব্র হয়,
ইচ্ছে হয় তোমাকে দুমড়ে ফেলি ক্ষুব্ধতার সাথে;
কর্ণফুলীর মোহনা ধুয়ে দেয় তখন পূর্ণিমার প্রপাতে ।
আমিতো সাম্পানের মাঝি বৈঠা ওঠে আসমানের পান;
তুমি জেগে ওঠো তখন রদ্যার ভাস্কর্যের মত শৈল্পিক ভাঁজে-
প্রার্থনারত দু’হাতের মতন।
চৌদ্দ.
একুশের অনু কবিতা
সজল কান্তি আচার্য
তোমরা অমর শহীদ হয়েছ
ন্যায়ের ঝান্ডা ধরি,
স্মৃতির প্রদীপ জ্বেলে যাই মোরা
তোমাদের কথা স্মরি।
তোমরা এনেছো মুক্তির আলো
ঊষার পূর্বাভাস,
তোমরাই বীর ছিন্ন করেছো
শোষণের নাগপাশ।
তোমরাই তব সূচনা করেছো
দিন বদলের পালা,
তোমাদের তরে লিখা হবে তাই
রক্ত বর্ণমালা।
রক্ত আখরে লিখা ইতিহাস
আমরা আজিকে পড়ি,
তোমাদের দেয়া অগ্নিমন্ত্রে
আমরাও যেন লড়ি।
হৃদয়ের কালি মনের তুলিতে
তোমাদের ছবি আঁকি,
তোমরা অমর বেঁচে আছো আজো
এই সান্ত্বনা নিয়ে থাকি।
পনের.
একুশ আমার অহংকার
আমেনা সাঈদ
ফাগুন হাওয়ায় লাগলো আগুন কৃষ্ণচূড়ার ডালে
শহীদ স্মৃতিতে নুয়ে আছে মন বিষাদের ছায়া গলে,
ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখ স্মরণে আসছে ভেসে
ভাষার জন্য দিয়েছিল প্রাণ বিজয়ের হাসি হেসে।
এই বাংলার দামাল ছেলেরা কঠিন শপথ নিয়ে
বাংলায় কথা বলা অধিকার শেষে আনল ছিনিয়ে,
বুলেট বৃষ্টি রক্ত বন্যা ভাসে বাংলার মাটি
বীর শহীদের দেশপ্রেম ছিল সোনার মতোই খাঁটি ।
কোন কালে কেউ শোনেনি এমন বিস্ময়কর কথা
ভাষার জন্য রক্ত ঝরেছে ইতিহাসে হয় গাঁথা ,
শহীদ রক্ত যায়নি তো বৃথা এনেছে বিজয় তাজ
বাংলা পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মান।
ষোল.
বাংলা ভাষা আমাদের হলো
ঝিনুক জোবাইদা
হাজার বছর আগে কোন এক মহা সমারোহে
তোমার উদয়, উদ্ভাসন যে অনুপম দ্রোহে,
শিমুলের রঙে, পলাশের ঢঙে, পরিচিতি অল্প
তবুও অচেনা -আলো আঁধারির কল্পিত গল্প
তোমাকে পাওয়া ছিল না সহজ সাধনার দিন
পাণ্ডুলিপির বর্ণমালায় অক্ষর ঋণ,
তারপর তুমি এসেছো চড়াই উৎরাই বেয়ে ;
কখনো এ ঘর কখনো ও ঘর অবশেষে পেয়ে
আলপথ বেয়ে ভিটে মাটি থেকে হয়েছো আমার ,
চর্যাগীতির পদগুলো হলো বাংলা ভাষার।
তবুও তোমার মিশেল অমিল পিঠে ছিল সিল,
বিজাতি বিলেতি, সব এসে মিশে উটকো বখিল-
হাজার বছর লালিত স্বপ্ন নিজের শব্দ;
হাজার যাতনা সয়েছে এসেছে পেরিয়ে অব্দ।
বর্ণমালার বুক চেপে ধরে বিজাতিক তীর
রক্তে ভিজেছে পথে ঘাটে এসে বাংলার বীর।
কৃষ্ণচূড়ার লালে লাল হয়ে শব্দ এসেছে
রঙিন জনতা রাস্তায় পড়ে রক্তে ভিজেছে,
থামেনি শপথ পেয়েছি আখর, অ আ ক খ ডাকি
এটাই আমার এটাই তোমার ভালোবাসা মাখি।
১২।০২।২২
সতেরো.
একুশ আছে বুকের ভিতর
আলেক্স আলীম
একুশ দিলো ভাষায় আমায়
একুশ দিলো দেশ
একুশ আছে বুকের ভিতর
কাটেনি তো রেশ।
একুশ আমায় শক্তি দিলো
শত্রু দিতে রুখে
একুশ আমার চেতনাতে
একুশ আমার ভীতে।
একুশ আমার পরিচয় আর
একুশ অহংকার
বিশ্ব জুড়ে মায়ের ভাষার
খুলে দিলো দ্বার।
পলাশ শিমূল রঙ পেয়েছে
একুশ তোমার কাছে
বাংলাদেশের সংস্কৃতি
গড়া তোমার ছাঁচে।
আঠারো.
ক্ষোভ
দিলওয়ার চৌধুরী
দ্রোহের আগুন জ্বলে শহীদ মিনারে
শেকড়ের টানে ফিরি একুশের মাঠে
মায়ের আঁচলে আঁকি স্বাধীন পতাকা।
বার বার শকুনেরা নদীর কিনারে
ওঁৎ পেতে শিকার খোঁজে মুমূর্ষু ঘাটে
আত্মজের জমিনে থাকে ক্ষুব্ধ শলাকা!
উনিশ.
অমর হলো ভাই
সৈয়দা ফৌজিয়া লুবনা
ভাষার মান আনতে গিয়ে
হারিয়ে গেলো ভাই,
সেদিন হতে দুখী মায়ের
মুখের হাসি নাই।
জায়নামাজে বসেই বাবা
চোখের জল ফেলে,
প্রিয় ভাইকে স্মরণ করি
কৃষ্ণচূড়া লালে।
বিশ্বমাঝে বাঙলা আজ
পেলো নিজের মান,
অমর হলো ভাই আমার
করে জীবন দান।
ভাই আমার ভাষা শহিদ
গর্বে ফোলে বুক,
ক্ষরণ ব্যথা সহ্য করি
ভুলি সকল দুখ।
বিশ.
প্রভাত ফেরী
– এ কে এম রেজাউর রহমান
নিউরন থেকে নিউরনে বয়
ভাবনার স্পন্দন
এর শক্তিতে মানুষের হাতে
জগতের নিয়ন্ত্রণ
ভাবনার জগৎ মূর্ত হয়
শব্দ বাক্য ঘিরে
গোটা জাতিকে মূক বানাতে
ভাষা নেয় তার কেড়ে
উর্দু পাকিদের এই চাল রুখতে
দিয়েছিল যারা প্রাণ
বস্তুত তাঁরা হয়েছেন অমর
বাঁচায়ে ভাষার মান
প্রভাত ফেরীতে ফুল তোড়া নিয়ে
তাঁদেরই সম্মান তরে
তাঁদের স্মরিয়া নিজে ধন্য হই
একুশে মিনার ‘পরে।
একুশ.
গুলি
রুহুল কাদের বাবুল
ভাষার দাবিতে মিছিল হয়েছে
সেখানে হয়েছে গুলি
মাটির জমিনে লুটিয়ে পড়েছে
ছাড়েনি মায়ের বুলি।
স্বাধীন স্বাধীন আমরা স্বাধীন
একথা বললে গুলি
জনতার ঢলে মিশে রাতদিন
উড়ছে দেশের ধূলি।
কোটি জনতার কন্ঠে আওয়াজ
মনের পর্দা খুলি
মুক্তিযুদ্ধের সেই রণ সাজ
মিছিলে সভায় তুলি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমার
কবিতা,রঙের তুলি
মিছিলে সভায়, ছুটছে সবাই
আবার ও ফুটছে গুলি।।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।